শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন

বেলুন তুমি কার আকাশে ওড়ো

স্বদেশ ডেস্ক:

না গিলতে পারি, না পারি খুলতে গলায় মাছের কাঁটা আটকে গেলে এই হয় দশা। যুক্তরাষ্ট্রের দশাও হয়েছে তেমন। একটা বেলুন শোরগোল বাধিয়েছে। বেলুনটি ঢুকে পড়েছে তার আকাশে। হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে বেলুন, এতে এত হইচই কীসের? কারণ আছে বটে। না, বেলুনটি তিন তিনটে বাসের সমান বড়, সে কারণে নয়। এর চেয়েও বড় কথা বেলুনটি মার্কিন প্রশাসনের ‘চিরশত্রু’ চীনের এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শরমের কথা হলো, এমনকি দূর নক্ষত্রের জগৎ থেকে অতি চুপিসারে ধেয়ে আসা আগন্তুক সব বস্তুকে যে দেশ অনেক দূর পথেই চিহ্নিত করে ফেলে, সেখানে নিজেদের জমিন থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার ওপরের আকাশে ঢুকে পড়ার সময় একটা বেলুনকে শনাক্ত করতে পারল না। আবার, টের পাওয়ার পরও বেলুনটিকে ভূপাতিত করতেও পারছে না। টানা কয়েকদিন মার্কিন আকাশসীমায় ভেসে বেড়াবে বেলুনটি। নিন্দুকমহলে প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধে

ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে ঠেকাবে কী করে, যে রাষ্ট্র ‘সুদূর চীন’ দেশের পাঠানো বেলুনকে নিজেদের আকাশসীমায় প্রতিরোধ করতে পারছে না।

এই বেলুন সম্পর্কে ওয়াশিংটন বলছে, ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ স্থাপনা ও যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করছে চীন। তবে অনিবার্য কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ঘটনায় অনুতাপ প্রকাশ করলেও বেইজিং বলছে, কিছু পশ্চিমা রাজনীতিক ও গণমাধ্যম ‘আবহওয়া পর্যবেক্ষণকারী’ এই বেলুনকে চীনের ওপর মার্কিন আক্রমণের পূর্বপট হিসেবে ব্যবহার করছে। বেলুনটিকে ভূপাতিত না করার যুক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এতে জনপদে মানুষের ক্ষতি হতে পারে। চীন একে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহকারী বেলুন বলে দাবি করলেও চটজলদি প্রত্যাখ্যান করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। এই বেলুন বাতচিতের মধ্যেই বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিনকেন।

গোয়েন্দা বেলুন কী

গোয়েন্দা বেলুন হলো অন্যতম নজরদারি যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আলোচ্য বেলুনটির মাধ্যমে চীন একই কাজ করছে, তথা সংবেদনশীল স্থাপনার ওপর দিয়ে ওড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। পেন্টাগনের সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার মার্কিন বিমানবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, গতিপথ বদল করতে পারে। তিনি বলেন, বেলুনটির সঙ্গে নজরদারির উপকরণ ঝোলানো আছে। তবে এর ভেতর কোনো পারমাণবিক কিংবা তেজস্ক্রিয় পদার্থ আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু বেলুনটি কীভাবে মার্কিন আকাশে ঢুকে পড়ল কিংবা চীন থেকে কে বা কারা এটির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করছে, এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

কোন পথে ভাসছে

বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলাস্কার অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আকাশে ঢুকে পড়ে। এরপর কানাডা হয়ে এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের মনটানার আকাশে চলে আসে। শুক্রবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের আকাশে। এরপর পূর্বমুখে যাওয়া শুরু করে কানসাস হয়ে গেছে মিসৌরির দিকে। এরপর এটি পূর্ব উপকূলের দিকে সরে যাচ্ছে। আমেরিকার যে তিনটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র আছে, এর মধ্যে একটি মনটানায়, যার ওপর দিয়ে বেলুনটি উড়েছে।

কত উচ্চতায় উড়ছে

নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার বেলুনটি ৬০ হাজার ফুট বা ১৮ কিলোমিটার উঁচু আকাশ দিয়ে উড়ছিল। এই উচ্চতা বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের সীমার বেশ ওপরে। ফলে রাইডার বলছেন, বেলুনটি জমিনের জন্য সামরিক কিংবা কোনো ভৌত হুমকি নয় মোটেও।

আকারে কত বড়

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এখনো নির্দিষ্ট করে বলেননি বেলুনটি কত বড়। তবে ১৮ কিলোমিটার ওপরে ওড়া বেলুনটি যে নিচ থেকে খালি চোখে সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছে, এর থেকে বেলুনটির আকার অুনমান করা কঠিন নয়, বলছেন রাইডার।

সিনেটর মার্কো রুবিও টুইটারে লিখেছেন, বেলুনটি দুটো বাসের সমান বড়। আর, এবিসি নিউজ প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে বলেছে, এটি তিনটি বাসের সমান বড়।

কেন ভূপাতিত করছে না যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন সেনাবাহিনী বেলুনটি ভূপাতিত করার পক্ষে নয়। কারণ হিসেবে জমিনে থাকা মানুষের জানমালের ক্ষতি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। একে ভূপাতিত করার জন্য এ-২২ যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পেন্টাগনের পরামর্শ মেনে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

বেইজিংয়ে বৈঠক স্থগিত

এই পরিস্থিতিতে বেইজিংয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি স্থগিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে নজরদারি বেলুন পাঠিয়ে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়’ দিয়েছে চীন। এই সময় কোনো আলোচনা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ব্লিনকেন বলেছেন, বৈঠকের চেয়ে আগে নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা জরুরি।

কী বলছে চীন

প্রাথমিকভাবে চীন বলছে, এটি একটি বেসামরিক বেলুন যা আবহওয়ার তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়। উড়তে উড়তে এটি মার্কিন আকাশে ঢুকে পড়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেইজিং কোনোদিন অন্য কোনো সার্বভৌম দেশের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেনি কিংবা আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি।’ এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে এ বিষয়ে ফোনে আলাপ করার কথা জানিয়েছে বেইজিং। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অনাকাক্সিক্ষত এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু মার্কিন রাজনীতিক ও সে দেশের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে ভিত্তিহীন গুজব ও উসকানি দিচ্ছে, তা বেইজিং কিছুতেই বরদাশত করবে না।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877